অন্য ফলের তুলনায় লাভজনক হওয়ায় মেহেরপুরে লিচুর চাষ বাড়ছে। যদিও এবার জেলার আমের বাগানে মুকুল ব্যাপকহারে এসেছে। তবে গত কয়েক বছরে ফলন ভালো হওয়ায় লিচু উৎপাদনে খ্যাতি অর্জন করেছে জেলার ৩ টি উপজেলা।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় প্রায় ৭৫০ হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান রয়েছে। ইতিমধ্যেই অধিকাংশ গাছেই মুকুল থেকে গুটি আসতে শুরু করেছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে এবার ৭ হাজার ৫’শ মেট্রিকটন লিচু উৎপাদন হতে পারে। যা থেকে ৫০ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।
মেহেরপুরে কয়েক বছর পূর্বে বানিজ্যিক ভাবে লিচু চাষ শুরু হলে তা লাভজনক হওয়ায় অনেকে প্রথম দিকে মিশ্র ফল হিসেবে কলা বাগানে, পেয়ারা বাগানে লিচু চাষ শুরু করে। লিচু গাছ বড় হয়ে গেলে অন্য গাছ কেটে ফেলা হয়। তবে এখন লিচুকে প্রধান ফল হিসেবে উৎপাদন করা হচ্ছে। পাশাপাশি বাগানে হলুদ, মরিচ ও বেগুনসহ সাথী ফসল চাষ করে কৃষক বাড়তি অর্থ আয় করছেন। স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পর উৎপাদিত লিচু রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়।
মেহেরপুর সদর, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে চাষীরা জানান, গাছে মুকুল আসার আগেই অনেকে তিন-চার মাসের জন্য বাগান বিক্রি করে দেন লিচু ব্যবসায়ীদের কাছে। আবার অনেকে লিচু গুটি হওয়ার পর বিক্রি করেন। লিচু আহরণের আগেই কয়েকবার হাতবদল হয় বাগানের মালিকানা। অনেক বাগান মালিক অধিক লাভের আশায় নিজেরাই পরিচর্যা করেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ফলন ভালো হয়। তবে বৈশাখী ঝড়ের কারণে অনেক সময় লোকসান গুনতে হয়।
গাংনী উপজেলার আজান গ্রামের কয়েকজন চাষী জানান, গাছে মুকুল আসার আগে বালাই দূরীকরণে কীটনাশক স্প্রে করা হয়। প্রতি বছরই এ জেলায় কোটি কোটি টাকার লিচু উৎপাদন হয়। তাদের আশা, এবারও ফলন ভালো হবে।
জুগিন্দা গ্রামের কয়েকজন চাষী জানান, এরই মধ্যে তিনাদের অধিকাংশ গাছেই মুকুল হয়েছে। কিছু গাছে ফুল থেকে লিচু গুটি আকৃতি ধারণ করেছে। গুটি যেন ঝরে না যায়, সেদিকে নজর রাখছেন চাষীরা। গুটি ঝরে পড়া রোধে অনেকে বাগানে সেচ দিচ্ছেন। কৃষি অধিদপ্তরের পরামর্শে দেওয়া হয়েছে সারও।
মেহেরপুর সদর উপজেলার গোভীপুর গ্রামের কয়েকজন লিচু চাষী জানান, লিচু বাগানে লাভ বেশি হওয়ার কারণে জেলায় এ ফলের চাষ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মুজিবনগর উপজেলার ভবের পাড়া এলাকার চাষীরা জানান, জেলায় দেশী আঠি লিচু, বুম্বাই, চায়না-৩ সহ কয়েকটি জাতের লিচু চাষ হচ্ছে। প্রতিবারই লিচুর ফলন ভালো হয়ে থাকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবারও আশানুরূপ ফলন হবে।